রেপিড এন্টিজেন টেস্ট এ যে কারনে নেগেটিভ রিপোর্ট দেয়া যায়না।
রেপিড এন্টিজেন টেস্ট এ ফলস নেগেটিভ রেজাল্ট কখন আসে?
রেপিড এন্টিজেন টেস্ট কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য একটি সহজলভ্য পদ্ধতি। এতে সময় ও খুব কম লাগে। মাত্র ১০/১৫ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ ৩০ মিনিটের মধ্যে এর ফলাফল জানা যায়। তাই দ্রুত ফলাফল জানতে রেপিড এন্টিজেন টেস্ট এর কোন বিকল্প নেই। কারণ আরটি-পিসিআর টেস্ট শুরু করার পর তা সম্পন্ন করতে অন্তত ৩ ঘন্টা সময় লাগে। এছাড়া আরটি-পিসিআর টেস্ট করার সময় একটি মেশিনে এক সাথে যতগুলো সেম্পল বসানোর ব্যবস্থা থাকে তা পরিপূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত ল্যাব গুলো সাধারণত মেশিনে প্রসেস চালু করেন না। তাই এর ফলাফল পেতে অনেক বেশী সময় অপেক্ষা করতে হয়।
এবার আসুন জানা যাক রেপিড এন্টিজেন টেস্ট কিট কিভাবে ভাইরাস সনাক্ত করে। রেপিড এন্টিজেন টেস্টএ আপনার নাক বা মুখ থেকে নেয়া সেম্পলটি টেস্ট কিটে দেয়ার পর এটি আপনার শরীরের ভাইরাল প্রোটিনের পরিমানের উপর ভিত্তি করে রেজাল্ট প্রদান করে। আপনার শরীরে নির্দিষ্ট পরিমান ভাইরাল লোড না থাকলে এটি কখনোই পজেটিভ দেখাবেনা। অর্থাৎ ভাইরাল লোড কম থাকার কারণে আপনি কোভিড-১৯ দ্বারা আক্রন্ত হওয়া সত্তেও আপনাকে নেগেটিভ রেজাল্ট দেখাবে।
একজন মানুষের শরীরে যখন করোনা ভাইরাস প্রবেশ করে তখন সেটি সেখানে বিস্তার লাভ করতে প্রায় ৫/৬ দিন সময় নেয়। এসময় কোন ভাইরাল লোড দেখা যাবেনা। যদিও এসময় থেকে শরীর খারাপ হওয়া শুরু হতে পারে। এই ৫/৬ দিন পর এটি বিস্তার শুরু করে এবং শরীর থেকেও হাঁচি/কাশি বা নিশ্বাসের মাধ্যমে ছড়াতে শুরু করে। এ প্রক্রিয়াটি প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চলে। এর পর আপনার শরীরে ভাইরাস থাকলেও তা হতে সংক্রমন বন্ধ হয়ে যায়। এসময় আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় আপনার কোভিড পজেটিভ হলেও তেমন ভয়ের কিছু নেই। তবে ক্ষতি যা হবার তা আগেই হয়ে গেছে। সেই ক্ষতি সারানোর জন্য আপনাকে চিকিৎসা অবশ্যই নিতে হবে।
যেহেতু ঠিক কোন দিন আপনি ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন তা আপনার জানা থাকার কথা নয় তাই আপনার ভাইরাল লোড কোন পর্যায়ে আছে তাও আপনার জানার সুযোগ নেই। সুতরাং পিক (peak) পজিশনে যাবার আগে বা পরে টেস্ট করলে তা ফলস নেগেটিভ দেখাবে। আর সবচেয়ে ভয়ানক ঘটনাটা এখানেই ঘটে। আপনি হয়তো নেগেটিভ রেজাল্ট পেয়ে ধরে নিয়েছেন আপনার শরীরে কোভিড-১৯ এর ভাইরাস নেই। এরপর আপনার পরিবারের সদস্যদের সাথে বা প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে মিশে যাচ্ছেন। এবং এভাবে সবার মাঝে ভাইরাস ছড়িয়ে দিলেন।
আরও পড়ুন: রেপিড এন্টিজেন না আরটি পিসিআর টেস্ট কোনটি করবেন?
এ কারনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রেপিড এন্টিজেন টেস্ট এর নেগেটিভ রেজাল্ট এর জন্য রিপোর্ট দিতে নিষেধ করে দিয়েছে। কারন এখানে নেগেটিভ মানে হচ্ছে অনিশ্চিত। সুতরাং এই কিটটি ভাইরাস খুজে না পেলে আপনাকে অবশ্যই নিশ্চিত হবার জন্য আরটি-পিসিআর টেস্ট করতে হবে। বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে রেপিড এন্টিজেন টেস্ট এর নেগেটিভ রিপোর্ট দেয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
কিছু কিছু ল্যাব থেকে এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রেপিড এন্টিজেন টেস্ট এর নেগেটিভ রেজাল্ট এর জন্য রিপোর্ট প্রদান করছে। যদিও সেখানে ইংরেজিতে লিখা থাকে “নিশ্চিত হবার জন্য আরটি-পিসিআর টেস্ট করুন”। কিন্তু সাধারণ মানুষের এটা বোঝার কথা নয় যে তার এই রিপোর্টের উপর নির্ভর করার কোন সুযোগ নেই এবং এটি অনেক বড় হুমকির কারন হতে পারে। এমনকি অনেকে অফিসে বা কাজে যোগ দেয়ার সময় রেপিড এন্টিজেন টেস্ট এর নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে যান এবং কর্তৃপক্ষও না জেনে তা গ্রহন করে নেন। এতে করে আমাদের অজান্তেই ভয়ানক ভাবে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে।
যেহেতু রেপিড এন্টিজেন টেস্ট এর জন্য নেগেটিভ রিপোর্ট দেয়া নিষেধ, তাই বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড-১৯ পরীক্ষার ডাটাবেজ এ রেপিড এন্টিজেন টেস্ট এর জন্য নেগেটিভ রিপোর্ট দেয়ার কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি। কিন্তু কিছু কিছু ল্যাব তাদের গ্রাহক ধরে রাখার জন্য এখনো যেভাবে রেপিড এন্টিজেন টেস্ট এর নেগেটিভ ল্যাব রিপোর্ট দেয় তা আমাদের সবার জন্য অনেক বড় একটি হুমকি।