মৃত ব্যক্তির জন্য আমাদের করণীয় : পাতা -০৩

0 60

পাতা -০৩

মৃত ব্যক্তির জন্য অযথা কান্নাকাটি না করে দু’আ করা

মুসলিমের বর্ণনা সূত্রে হযরত উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন (আবু সালামা ইন্তেকাল করলে) “আবু সালামা পরিবারের লোকেরা কান্না শুরু করে দিলেন। এ সময় রাসূলুল্লাহ (দ্বঃ) বললেন: তোমরা তোমাদের নিজেদের ব্যাপারে ভাল কথা ছাড়া কোন খারাপ কিছু বলাবলি করো না। কেননা, তোমরা যা কিছু বল তার স্বপক্ষে ফেরেশতারা ‘আমীন’ বলে থাকেন। এরপর তিনি দু’আ করলেন এভাবে:
اللهُـمِّ اغْفِـرْ لِـ-فُلاَنٍ (باسـمه)وَارْفَعْ دَرَجَتََـهُ فِي المَهْـدِيّيـنَ ، وَاخْـلُفْـهُ في عَقِـبِهِ في الغَابِِـرِينَ، وَاغْفِـرْ لَنَا وَلَـهُ يا رَبَّ العـالَمـين، وَافْسَـحْ لَهُ في قَبْـرِهِ وَنَـوِّرْ لَهُ فِيهِ
হে আল্লাহ! আবু সালামাকে ক্ষমা কর এবং হেদায়াত প্রাপ্তদের মধ্যে তাঁর মর্যাদাকে উঁচু করে দাও, তুমি তার বংশধরদের অভিভাবক হয়ে যাও। হে রাব্বুল আলামীন! আমাদেরকে এবং তাকে ক্ষমা করে দাও। তার কবরকে প্রশস্ত এবং জ্যোতির্ময় করে দাও।” (হা: নং- ২০০৬)
কারো মৃত্যু সংবাদ শোনে কিংবা কোন মৃত ব্যক্তিকে দেখে অযথা কান্নাকাটি না করে, তার জন্য দু’আ করাই উত্তম। জাহেলী যুগের মানুষের মত মৃতের জন্য কান্নাকাটি করা হলে তার জন্য মৃতব্যক্তিকে আজাব দেয়া হয়। হযরত ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: উমর (রাঃ) (আততায়ীর আঘাতে) আহত হয়ে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। লোকেরা চিৎকার করে কান্নাকাটি শুরু করে দিল। যখন তাঁর জ্ঞান ফিরে আসল তখন তিনি
বললেন:
أَمَا عَلِمْتُمْ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَالَ إِنَّ الْمَيِّتَ لَيُعَذِّبُ بِبُكَاءِ الْحَيِّ
তোমরা কি জানো না! রাসূলুল্লাহ (দ্বঃ) বলেছেন: মৃত ব্যক্তিকে জীবিতদের কান্নার দরুন শাস্তি দেয়া হয়। (বুখারী হা: নং ১২০৪, মুসলিম হা: নং ২০২০)
তবে মৃত ব্যক্তির প্রতি শোকাহত হলে নীরবে অশ্রু বিসর্জন করা না জায়েয নয়। কারণ নীরবে কান্নকাটি হলো পরস্পরের অন্ত:করণে দয়ার বহিঃপ্রকাশ। মুসলিমের বর্ণনা সূত্রে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: “সা’দ ইবনে উবাদা (রাঃ) কঠিন পীড়ায় আক্রান্ত হলে রাসূলুল্লাহ (ছুঃ) আবদুর রহমান ইবনে আওফ, সা’দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস ও আবদুল্লাহ ইবনে মসউদকে সঙ্গে নিয়ে তাকে দেখতে গেলেন। তিনি সেখানে পৌঁছে তাকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় দেখতে পেলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন অবস্থা কি শেষ? লোকেরা বলল, না ইয়া রাসূলুল্লাহ! অতঃপর সর্বশেষ অবস্থা দেখে রাসূলুল্লাহ (ছুঃ) কাঁদতে লাগলেন। উপস্থিত লোকেরাও তাঁর কান্না দেখে কাঁদতে শুরু করলো। এরপর রাসূলুল্লাহ বললেন: তোমরা কি শোন নি যে, আল্লাহ তা’আলা চোখের অশ্রুর কারণে ও হৃদয়ের অস্থিরতার জন্য তাঁর কোন বান্দাকে শাস্তি দেবেন না। বরং তিনি এ জিহ্বার কারণে কাউকে শাস্তি দেবেন কিংবা দয়া করবেন না।” (হা: নং ২০১৩)
অবশ্য মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করে কাঁদা জায়েয নেই। মহিলারা কিন্তু সাধারণত বিলাপ করে কাঁদে। কারো জন্য বিলাপ করে কাঁদা হলে তাকে আজাব দেয়া হয়। হযরত আলী ইবনে রবী’আ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: “সর্ব প্রথম যে ব্যক্তির প্রতি বিলাপ করা হয়েছে সে হচ্ছে কুফা নগরীর কারাজা ইবনে কা’ব। মুগীরা ইবনে শু’বা (রাঃ) বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছুঃ)-কে বলতে শুনেছি:
مَنْ نِيْحَ عَلَيْهِ فَإِنَّهُ يُعَذِّبُ بَمَانِيحَ عَلَيْهِ يَوْمَا الْقِيَامَةِ
যার জন্য বিলাপ করে কাঁদা হয় কিয়ামতের দিন তাকে বিলাপ অনুসারে শাস্তি দেয়া হবে। (বুখারী, হা: নং ১২০৬, মুসলিম- হা: নং ২০৩২)
ইবনে মাজার বর্ণনা সূত্রে হযরত বিলাল ইবনে ইয়াহইয়া (রাহঃ) থকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “হযরত হুজায়ফা (রাঃ) এর উপস্থিতে কেউ মারা গেলে তিনি বলতেন: তার মৃত্যু সম্পর্কে তোমরা কাউকে খবর দিও না। কেননা, আমি তার জন্য বিলাপের আশংকা করছি। আমি আমার এই দুই কানে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (ছুঃ) কারো জন্য বিলাপ করতে নিষেধ করেছেন।” (হা: নং ১৪৭৬)

- Advertisement -

মৃত ব্যক্তির শরীর কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা।

(সূত্র: বায়হাক্বী)

মৃত ব্যক্তির চোখ খোলা থাকলে তা বন্ধ করে দেয়া এবং মৃতের সম্পর্কে কোন খারাপ মন্তব্য না করা

হযরত শাদ্দাদ ইবনে আওস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (দ্বঃ) বলেছেন:
إذا حضرتم موتاكم فأغمضوا البصر فإن البصر يتبع الروح وقولوا خيرا فإن الملائكة تؤمن على ما قال أهل البيت
তোমরা তোমাদের মৃত ব্যক্তির নিকট উপস্থিত হয়ে তার চোখ দুইটি বন্ধ করে দিও। কেননা, চোখ রূহের অনুসরণ করে এবং তোমরা তার সম্পর্কে ভালো মন্তব্য করবে। কারণ গৃহবাসীরা যা বলে ফেরেশতারা তাতে ‘আমীন’ বলেন। (ইবনে মাজাহ হা: নং ১৪৫৫)
মুসলিম ও ইবনে মাজাহর বর্ণনা সূত্রে হযরত উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: (আমার স্বামী আবু সালামা ইন্তেকালের পর) যখন “রাসূলুল্লাহ (জ্বঃ) আবু সালামাকে দেখতে এলেন, তখন তার চোখ খোলা ছিল। তিনি তার চোখ বন্ধ করে দিলেন এবং বললেন: যখন রূহ কবয করা হয় তখন চোখ তার অনুসরণ করে।” (অর্থাৎ চোখ রূহের প্রতি তাকিয়ে থাকে। সুতরাং তা বন্ধ করে দিতে হয়।) (মুসলিম- ২০০৬, ইবনে মাজাহ্ হা: নং ১৪৫৪)
হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (জ্বঃ) বলেছেন:
لا تسبوا الأمْوَاتِ فَإِنَّهُمْ قَدْ أَقْضُوا إِلَى مَا قَدَّمُوا
তোমরা মৃত ব্যক্তিদেরকে গালি দিও না। কেননা, তারা তাদের সকল ভাল- মন্দ কৃতকর্মের ফলাফল লাভের সম্মুখীন হয়ে গিয়েছে। (বুখারী হাঃ নং ১৩০৩)

আগের পাতা: ০২ | পরবর্তী পাতা: ০৪

- Advertisement -

Comments
Loading...